দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের নামে আওয়ামী লীগ সরকার কায়েম করেছে এক নতুন স্বৈরতন্ত্র। এ কথা শুরু থেকেই বলে আসছে বিএনপি। সরকারের মতের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলেই গুম, মামলা, রিমান্ড আর ক্রস ফায়ারের নামে খুন করা হচ্ছে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের। থানায় কোনো অভিযোগ না থাকলেও ধরে এনে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন মামলায় গেফতার দেখানো হচ্ছে। আর গ্রেফতার মানেই হলো রিমান্ড। রিমান্ড মানে অকথ্য নির্যাতন। বিরোধী দলকে দমিয়ে রাখতে এসবই হচ্ছে অনির্বাচিত শেখ হাসিনা সরকারের নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকাণ্ড!
আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষের মাঝে গুম আতঙ্ক তৈরি করেছে দিনে দিনে। ক্রসফায়ার চলছে সমানে। রিমান্ডের তো কোন হিসাবই নাই। রিমান্ডের নামে নির্যাতনে কত মানুষ জীবনী শক্তি হারিয়েছেন তা কেউ হিসাবও রাখেনি। আদালতও চলে সরকারের ইচ্ছায়। আইনের তোয়াক্কা না করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয় চাহিদা মাফিক। এর মাধ্যমেই সমাজে একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছরের শাসনে এটাই তার বড় সফলতা!
সর্বশেষ কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবীতে সক্রিয় আন্দোলনের ১২ শিক্ষার্থীকে সাদা পোশাকে আটক করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রথমে তাদের বিষয়ে কোন রকমের খোজ খবরই ছিল না। আটকের পর তাদের কোথায় রাখা হয়েছে এটাও স্বীকার করছিল না কেউ। এনিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন অভিভাবকেরা। ৩দিন অপেক্ষা ও খোঁজাখুজির পর ১২ শিক্ষার্থীর অভিভাকরা এক সাথে সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। তারা সন্তানদের খোজ জানতে গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন।
একই সাথে তাদেরকে সাদা পোশাকে ডিবি (ডিটেক্টিব ব্রাঞ্চ) পরিচয়ে তোলে নেয়ার ঘটনা বর্ণনা করেন অভিভাবকরা। এর একদিন পর তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করা হয়। একই সাথে চাওয়া হয় রিমান্ড। টানা চার দিন লুকোচুরির পর ১২ ছাত্রকে আদালতে হাজির করা হলে উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের মাঝে স্বাস্তি ফিরে আসে। তবে আদালতে হাজির করা হলেও পুলিশের কর্তব্য কাজে বাঁধা দেয়ার অভিযোগ আনা হয় তাদের বিরুদ্ধে। এই মামলায় রিমান্ড চাওয়া হয় ১০ দিন করে। কিন্তু আদালত ২দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।
এর আগে গত আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে ২২ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাদেরও সাদা পোশাকে ডিবি পরিচয়ে প্রথম তোলে নেয়া হয়। পরবর্তীতে নানা নাটকীয়তার পর হাজির করা হয় আদালতে। তাদেরকেও রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত সোমবার বিএনপি’র নিরীহ কর্মসূচি মানববন্ধন থেকে শতাধীক নেতাকর্মী গ্রেফতারের অভিযোগ ওঠে। পুলিশ তাদেরকে মানববন্ধনে আসার পথে কর্মসূচির জন্য নির্ধারিত স্থানের আশেপাশে গ্রেফতার করে।
পরবর্তীতে ৪৯জনকে মঙ্গলবার আদালতে হাজির করে রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়। আদালতে পুলিশের আবেদনে সন্তুস্ট হয়ে তাদের সবাইকে রিমান্ড মঞ্জুর করে। এই হচ্ছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশে গুম আর রিমান্ডের নির্যতানের সর্বশেষ উদাহরণ।
গত আগষ্টের প্রথম সপ্তাহে কলেজের দুই শিক্ষার্থী বাসের চাপায় নিহত হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা নিরাপদ সড়কের দাবীতে আন্দোলন গড়ে তোলে। স্কুলের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সারা দিয়ে রাজপথে নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সবস্তরের মানুষ সমর্থন জানায়। এতে সরকার অনেকটা বেকায়দায় পড়ে যায়। কিন্তু, এই শান্তিপূর্ণ একটি অরাজনৈতিক আন্দোলন দমনেও শেখ হাসিনা সরকার কঠোর নির্মমতার আশ্রয় নেয়। স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের উপর লেলিয়ে দেয়া হয় হেলমেটা বাহিনী। এই হেলমেট বাহিনীর সদস্য কারা তার পরিচয় আজো জানা যায়নি। বলা হয়ে থাকে, শ্রমিক লীগ ও ছাত্র লীগের গুন্ডা প্রকৃতির লোকদের হেলমেট পড়িয়ে অস্ত্রহাতে পুলিশের পাশাপাশি আন্দোলন দমনে নামানো হয়। এই হেলমেট বাহিনীর সদস্যরা শিক্ষার্থীদের উপর
বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাসী আক্রমণ চালায়। এতে অনেকেই আহত হন।
এর আগে কোটা সংস্কার আন্দোলন দমনেও শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে লেলিয়ে দেয়। প্রকাশ্য দিবালোকে ছাত্র লীগের গুন্ডা বাহিনীর সদস্যরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্তদের উপর চড়াও হন। এমনকি প্রকাশ্যে দিবালোকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে পা কেটে দেয়ার ঘটনাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কিল, ঘুষি, লাথি মারার দৃশ্য ত ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আইন নিজের হাতে তোলে নিয়ে নিরীহ ছাত্র ছাত্রীদের নির্মমভাবে প্রহার করেছে ছাত্র লীগ।
শুধু তাই নয়, এই সন্ত্রাসী আক্রমনে হামলার শিকার হয়ে অনেকে হাসপাতালে পর্যন্ত থাকতে পারেনি। শেখ হাসিনার গুন্ডাবাহিনী তাদেরকে হাসপাতাল থেকে বের করে দিতে বাধ্য করেছে। মোট কথা হচ্ছে, শেখ হাসিনা, গুন্ডা বাহিনী ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে তার মসনদ আকড়ে রাখতে চাইছেন। তিনি যে কোন মূল্যে ক্ষমতার চেয়ার ধরে রাখতে চান। ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখতে গিয়ে যত রকমের সন্ত্রাসী কার্যক্রম করা লাগে সেটাই করছেন শেখ হাসিনা। এর নির্মম উদাহরণ হল কিশোর ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলনে ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্লজ্জ সন্ত্রাসী আক্রমণ!
এর পাশাপাশি আক্রমনের শিকার শিক্ষার্থীরাই আবার গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে নির্যাতনের মুখোমুখি হচ্ছেন। ক্রসফায়ারের নামে মানুষ খুন করা হচ্ছে শেখ হাসিনার আরেকটি অস্ত্র। সম্প্রতি মাদক বিরোধী অভিযানের নামে ক্রসফায়ারে বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন অনেকে। এর মাধ্যমে বিরোধী জোটের সক্রিয় অনেক রাজনৈতিক কর্মীকেও ক্রসফায়ারে হত্যা করার অভিযোগ উঠেছে।
মনে রাখতে হবে, জনগণই দেশের প্রকৃত মালিক। সরকার আর রাষ্ট্র এক কথা নয়। জনগণের সম্পত্তি রাষ্ট্রকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য যাদের জনগণ মনোনীত করবেন তারা হবে সরকার। জনগণ রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য যে ক্ষমতা তাদের দেন তা তাদের ওপর জুলুম ও অন্যায়ভাবে প্রয়োগ করার জন্য নয়।
জনগণ ও তাদের জান-মাল রক্ষার দায়িত্বে এসে সরকারের মত বিরোধী হলেই তাদের ওপর অত্যচার-জুলুম চালাবেন, এই অধিকার হাসিনা সরকারকে দেয়া হয়নি। মনে রাখবেন, এই দেশ আপনাদের কাছে ইজারা দেয়া হয়নি।
লেখকঃ মোঃ সাব্বির ; da.sabbir@hotmail.co.uk