একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বহুল প্রত্যাশিত ইশতেহার ঘোষণা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
ইশতেহারে ১৪ প্রতিশ্রুতি ও ৩৫ অঙ্গীকার ঘোষণা করা হয়েছে।পাশাপাশি কিছু চমকও রাখা হয়েছে। শিক্ষিত ও তরুণ প্রজন্মের ভাবনা এবং তাদের চাহিদার বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে ইশতেহারে।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করবে বলে ইশতেহার ঘোষণায় বলা হয়েছে।
যেসব অঙ্গীকার দেয়া হয়েছে-
ইশতেহারে ৩৫টি অঙ্গীকারের ঘোষণা দেন ড. কামাল হোসেনের পক্ষে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। উল্লেখযোগ্য অঙ্গীকারগুলোর মধ্যে আছে-
#ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে;
# নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দেয়া। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার মাধ্যমে মুক্তভাবে মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার নিশ্চিত করা;
# সংসদ হবে দুই কক্ষের। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ সৃষ্টি করা হবে;
# সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে (ফ্লোর ক্রসিং) পরিবর্তন আনা হবে;
# সাদা পোশাকে কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী;
# রিমান্ডের নামে পুলিশি হেফাজতে যে কোনো ধরনের শারীরিক নির্যাতন বন্ধ করা হবে;
# মিথ্যা মামলায় সহায়তাকারী পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযুক্তদের অভিযোগ প্রমাণ না হলে ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে;
# দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া হবে। বর্তমান সরকারের আমলের দুর্নীতি তদন্ত করে তার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের আওতায় আনা হবে;
# স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা;
# কর্মক্ষেত্রে কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নারীর ওপর বাচিক কিংবা শারীরিক যৌন হয়রানির ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স;
জাতীয় ঐক্য গড়া, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার ভারসাম্য আনা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও নাগরিকদের নিরাপত্তা বিধানসহ ঐক্যফ্রন্টের ১৪ প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করেন ড. কামাল হোসেন।
এর আগে বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ইশতেহার ঘোষণার মঞ্চে উঠেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। এর পর শুরু হয় ইশতেহার ঘোষণা।
ইশতেহারের শুরুতে বলা হয়েছে-একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জিতে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবে।
বলা হয়, দেশের সব নাগরিকের কল্যাণে সরকার পরিচালনা করবে ঐক্যফ্রন্ট। এ পরিচালনার মূলনীতি হবে ঐকমত্য। সবার অন্তর্ভুক্তি (অন্তর্ভুক্তি) ও যে কোনো রকম প্রতিহিংসা থেকে মুক্ত থাকা।
বলা হয়- ‘প্রজাতন্ত্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণ’ সংবিধানের সপ্তম অনুচ্ছেদে বর্ণিত এ নীতির ভিত্তিতে সরকার পরিচালনা করা হবে। জনগণের মালিকানা জনগণের হাতে দেয়া হবে।
ইশতেহার ঘোষণার আগে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সূচনা বক্তব্য দেন। তার পক্ষে ইশতেহার পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
এর আগে জোটের পক্ষ থেকে প্রথম দফায় নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে এবং ডিসেম্বরের ৮ তারিখে ইশতেহার ঘোষণার কথা বললেও পরে তা স্থগিত করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, ড. রেজা কিবরিয়া প্রমুখ।
ইশতেহার তৈরির জন্য ঐক্যফ্রন্ট ৬ সদস্যের একটি কমিটি করে দেয়। কমিটিতে বিএনপি থেকে সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, গণফোরাম থেকে আ ও ম শফিক উল্লাহ, নাগরিক ঐক্য থেকে ডা. জাহেদ উর রহমান, জেএসডি থেকে শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের অধ্যক্ষ ইকবাল সিদ্দিকী এবং ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে রাখা হয়।