ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা দেশদ্রোহিতা: ড. কামাল হোসেন

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, দেশে নির্বাচনের নামে প্রহসন হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এবং নির্বাচনের ওপর আঘাত আসলে ভয়াবহ পরিণতি হবে। এমন শাসন জীবনে দেখিনি মন্তব্য করে তিনি বলেন- ‘দেশে সুশাসন আছে বলা যাবে না। সুশাসন আছে এমনটি যদি কেউ দাবি করে তাহলে বলবো, তিনি মিথ্যা বলছেন। আপনি মিথ্যুক।’ তিনি বলেন, মানুষের ভোটের অধিকারের ওপর আঘাত স্বাধীনতার ওপর আঘাত। আর এই স্বাধীনতার ওপর আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল।

গতকাল সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ শফিউর রহমান মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি। ৭০তম বিশ্ব মানবাধিকার দিবস ও ৪৭তম বিজয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘মানবাধিকার, সুশাসন ও ভোটাধিকার’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মানবাধিকার ফেডারেশন (বিএইচআরএফ)।

সংগঠনটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ড. মোহাম্মদ শাহজাহানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন-সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নূরুদ্দীন খান, পুলিশের সাবেক আইজি ড. এম এনামুল হক, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ পরিষদের চেয়ারম্যান ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি ড. গোলাম রহমান ভূঁইয়া।

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘তথাকথিত নির্বাচনে আপনারা যদি ৩০০ সিট চান, তাহলে বলেন আমরা দিয়ে দেই। আপনারা আরো পাঁচ বছর থাকবেন, এটা তো বলেই যাচ্ছেন। এভাবে চাওয়ার চাইতে আমাদের কাছে বলেন। আমরা হাত তুলে মেনে নেই। এভাবে নির্বাচনের নামে প্রহসনের মধ্যদিয়ে ৩০০ লোককে নির্বাচিত করার চেষ্টা চলছে। উদ্দেশ্য পাঁচ বছর থাকা। এই পাঁচ বছরের ব্যাপারে তো আমি এখনই হাত তুলে বলে দিতে পারি।’

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে ড. কামাল হোসেন বলেন, আপনি তো বলেছেনই, আরো পাঁচ বছর থাকতে চান। অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করতে চান। এ পাঁচ বছরের পর আরো কিছু কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, তখন আরো পাঁচ বছর থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করবেন। অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করার জন্য সময় এভাবেই বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে আলহামদুলিল্লাহ। সবাই বলবে আরো পাঁচ বছর থেকে অসম্পূর্ণ কাজ শেষ করি, এটা নিয়মে পরিণত হবে।

পুলিশের হয়রানি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুলিশকে ব্যবহার করে যেভাবে হয়রানি, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, তা সংবিধান পরিপন্থি। পুলিশ মানুষকে রাস্তায় রাস্তায় হয়রানি করছে। বিনা কারণে গ্রেপ্তার করছে। তফসিল ঘোষণার পরও পুলিশ যেভাবে গ্রেপ্তার চালাচ্ছে, সেটি লজ্জাকর। সরকারকে বলবো, পুলিশকে এসব কাজ থেকে বিরত থাকতে বলেন। পুলিশকে এভাবে অপব্যবহার করতে থাকলে-একদিন আপনাদের বিচার হবে, শাস্তি হবে। এখানে এবং পরকালে।

এখানে যদি কোনো কারণে পার পেয়ে যান, পরকালে আপনারা পার পাবেন না ইনশাআল্লাহ, সেটা মনে রাখবেন।
ড. কামাল বলেন, যদি মনে করা হয় মানবাধিকার সংবিধানে লেখা আছে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি বলবো, চিন্তার অবশ্যই কারণ আছে। এই যে রাস্তায় পুলিশ ধরছে, আমি অবাক হচ্ছি এরা কোন আইনে মানুষকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এভাবে ধরে নিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা পুলিশের নাই। এটা মানবাধিকারের লঙ্ঘন। দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হতে থাকলে, আপনাদের শাস্তি হবে, এটি মনে রাখবেন। তিনি বলেন, ‘এখন যারা ক্ষমতায় আছেন, তাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আপনারা কোন্‌ ক্ষমতা বলে শাসন করছেন-সেটা আমরা পরে বুঝবো। এখন যেটা করছেন একদমই সংবিধান পরিপন্থি কাজ করছেন।’

ড. কামাল বলেন, ‘আমি উচিত কথা বলছি, ধরে নিয়ে যান আমাকে। আপনার পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আমি এ কথা বলছি। খুব সাহস থাকলে আপনারা ধরেন আমাকে। আশ্চর্য স্বাধীনতার ৪৭ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে। যারা মনে করবে আমরা ক্ষমতা পেয়ে গেছি, মানবাধিকারের কথা মানতে হবে না।

সংবিধান মেনে চলার আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর করা সংবিধান সংরক্ষিত আছে। সংবিধানকে শ্রদ্ধার সঙ্গে মানার চেষ্টা করেন। আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অমান্য করে দেশ চলতে পারে না। সংবিধান লঙ্ঘন করলে বঙ্গবন্ধুকে সম্মান করা হয় না। স্বাধীনতার ওপর আঘাত করা হয়। এটা থেকে বিরত থাকতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভোটের অধিকার সবাই ভোগ করুক। স্বাধীনভাবে নির্ভয়ে তারা যেন ভোট দিতে পারেন। স্বাধীন দেশে যদি নাগরিকেরা ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে সেটি হবে স্বাধীনতার ওপর আঘাত। এ আঘাত দেশদ্রোহিতার শামিল। কেউ যদি মনে করে দেশদ্রোহিতা করে পার পাওয়া যায়, তা ঠিক না। আজ হোক কাল হোক তার বিচার হবেই।’

নির্বাচন কমিশনকে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘সংবিধান আপনাদের ক্ষমতা দিয়েছে। সব ক্ষমতা আপনাদের। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আপনাদের ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। জনগণের ভোটের অধিকার রক্ষা করুন। এটা আপনাদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। সরকার যদি কোনো সংবিধান পরিপন্থি কাজ করে এর থেকে বিরত রাখার ব্যবস্থা করুন। সরকারকে আদেশ দেন, বলেন পুলিশ সরান। যদি আপনারা ক্ষমতা কাজে লাগান ইনশাআল্লাহ ভালো নির্বাচন হবে। উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ সামনে দেখা যাচ্ছে। আর এটা না করে নির্বাচনের ওপর যদি কোনো আঘাত দেয়া হয়, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।

 

সূত্রঃ মানবজমিন

http://mzamin.com/article.php?mzamin=150585