আলোচনায় ফেনী-১ আসন

 

আর মাত্র একদিন বাকি। শনিবার রাত পোহালেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রোববার দিনভর চলবে ভোটগ্রহণ। এর আগে সর্বত্রই আলোচনায় ফেনী-১ আসন। কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচনী এলাকায় কী হবে, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক হইচই।

আসনটি থেকে টানা পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন খালেদা জিয়া। এর মধ্যে তিনবার প্রধানমন্ত্রী ও দুবার বিরোধীদলীয় নেত্রী ছিলেন। সময়ের দাবি মেটাতে অন্য আসনগুলো ছেড়ে দিলেও পৈতৃক এলাকার আসনটি একবার ছাড়া বরাবরই নিজে রাখতেন। শুধু ২০০১ সালে ছোট ভাই মেজর (অব.) সাঈদ এস্কান্দারকে ছেড়ে দেন তিনি। আর ২০১৪ সালে বেগম জিয়াবিহীন নির্বাচনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আখতার।

তবে এবার চিত্রপট ভিন্ন। সেখানে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন শিরীন। আর খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশ নিতে না পারায় সেখানে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবদল সভাপতি রফিকুল আলম মজনু। তরুণ এ রাজনীতিকের বাড়ি ফেনী সদরের মোটবী ইউনিয়নের সাতসতি গ্রামে। ১৪০ মামলার বোঝা নিয়ে পরশুরামের বিলোনিয়া থেকে ছাগলনাইয়ার মুহুরীগঞ্জ পর্যন্ত চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। জেলা শহরের অর্ধেকজুড়ে এ আসন। ফুলগাজী, পরশুরাম ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত ভিআইপি আসনটিতে ‘৭৩ সালের পর আওয়ামী লীগ জয় পায়নি। ‘৭৯ সালে বিপুল ভোটে জয়ী হন ধানের শীষের প্রার্থী লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীরবিক্রম। পরের দুবার ‘৮৬ ও ‘৮৮ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির হয়ে সাংসদ হন তিনি।

এবার এ আসনে মোট ভোটার তিন লাখ চার হাজার ৭১৫। এর মধ্যে পুরুষ এক লাখ ৫৪ হাজার ৮৬৬ ও নারী এক লাখ ৪৯ হাজার ৮৬৯। নতুন ভোটার ৪২ হাজারের বেশি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত অঞ্চলের আনাচে-কানাচে জোরেশোরে গণসংযোগ করছেন শিরীন। বসে নেই মজনুও। মামলা-হামলা উপেক্ষা করে নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনিও ছুটছেন এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।

গণসংযোগে নিজ নিজ জোটের নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও দৃষ্টি কেড়েছে। এখানে সমানতালেই চলছে নৌকা-ধানের শীষের প্রচার। আওয়ামী লীগের হয়ে মাঠে নেমেছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিমসহ জেলা নেতারা।

বিএনপি প্রার্থী রফিকুল আলম মজনুর দাবি, নির্বাচনের আগে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইসি। তবে তা তো হয়নি, উল্টো প্রচারকালে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা হচ্ছে। চলছে ব্যাপক ধরপাকড়। নির্বাচনী কার্যালয় থেকেই বিএনপি কর্মীদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। প্রতিকূল পরিবেশেও নেতাকর্মীরা প্রচার চালাচ্ছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি।

মহাজোট প্রার্থী শিরীন আখতারের দাবি-গেল মেয়াদে আমি এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। ইতিমধ্যে উঠান বৈঠক করে জনগণের সুখ-দুঃখ জেনেছি। সবাই নৌকার পক্ষে সাড়া দিয়েছেন। উন্নয়নের স্বার্থে জনগণ আমাকেই ভোট দেবেন। শেখ হাসিনার জয় হবেই।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী শেখ আবদুল্লাহ আপেল প্রতীক নিয়ে প্রথম দিকে বেশ প্রচার চালান। একপর্যায়ে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে গেল কদিন ধরে প্রচার বন্ধ রেখেছেন তিনি। দৃশ্যত মহাজোটের মনোনয়ন নিয়ে সৃষ্ট দ্বন্দ্ব মিটে গেছে। তবে ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক অভিজ্ঞরা। এ ছাড়া এখানে জাসদের নিজস্ব কর্মীবাহিনী তেমন নেই। ফলে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ওপর ভর করে চলছেন শিরীন। অন্তিমলগ্নে নাটকীয় কোনো অঘটনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।