বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ, ১১ জনকে আটক , বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ, গুলি, বোমা বিস্ফোরণ বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ, কেন্দ্র দখলের চেষ্টা আর সংঘাতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ১৭ জেলায় ২১ জন নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে চট্টগ্রামে ৩ জন, রাজশাহী ২ জন, কুমিল্লা ২ জন এবং রাঙ্গামাটি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, সিলেট, নরসিংদী, লালমনিরহাট, বগুড়া, নাটোর, দিনাজপুর, কক্সবাজার, লক্ষ্মীপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও যশোরে ১ জন করে মারা গেছেন।
দেশের ২৯৯টি সংসদীয় আসনে রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট হলেও চট্টগ্রাম, নোয়াখালীসহ কয়েকটি স্থানে আগের রাতেই সংঘাত শুরু হয়। ভোটের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে জাল ভোট দেয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ককটেল বিস্ফোরণ, গুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। অনেক স্থানেই বিএনপির কোনো এজেন্ট ছিল না। অন্তত ২০ জেলায় বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে দলটির প্রার্থীরা। অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের ঢুকতে বাধা দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এছাড়া জাল ভোট দেয়া, ব্যালট পেপার ছিনতাই, কেন্দ্র দখল, ককটেল বিস্ফোরণসহ নানা অভিযোগে ভোট বর্জন করেছেন বিএনপি-জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী। যুগান্তর রিপোর্ট, ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
চট্টগ্রাম, হাটহাজারী, সাতকানিয়া ও সীতাকুণ্ড : চট্টগ্রামের পটিয়ায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষে আবু সাদেক নামে এক বিএনপি কর্মী নিহত হয়েছেন। উপজেলার ঝিরি এলাকায় চট্টগ্রাম-১২ আসনের বিএনপি প্রার্থী এনামুল হকের বাড়ির সামনে ওই সংঘর্ষ হয়। এদিকে বাঁশখালী উপজেলার কাঠারিয়া ইউনিয়নের বরইতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ গুলি ছুড়লে জাতীয় পার্টির আহমেদ কবির নামে একজন নিহত হন। এ সময় ৮ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে। আহতরা হলেন ফরিদুল আলম, সালেহ আহমেদ, হাসান মুরাদ, মিজানুর রহমান, মো. মুরাদ, তারেক ও মিনহাজ। জামায়াত কর্মীদের গুলিতে তারা আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে পটিয়ায় শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে দ্বীন মোহাম্মদ নামে এক যুবলীগ কর্মী নিহত হয়েছেন। তিনি কুসুমপুরা ইউনিয়ন যুবলীগের সদস্য।
চট্টগ্রাম-৫ (বায়েজিদ আংশিক) হাটহাজারী আসনে সাত কেন্দ্রে পুলিশকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তরা ইট নিক্ষেপ, ককটেল বিস্ফোরণ ও ব্যালট ছিঁড়ে ফেলে। এ সময় পুলিশ ফাঁকা গুলি করে। এ সব ঘটনায় সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে পুলিশ তিনজনকে আটক করেছে।
সাতকানিয়ার সৈয়দাবাদ স্কুল, সোনাকানিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ডেমসা বোর্ড অফিস, বড়হাতিয়া, সৈয়দ হাজী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ অন্তত ২০টি কেন্দ্রে সংঘর্ষ, পুলিশের গুলি ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। এদিকে শতাধিক কেন্দ্রে ভোটের আগের রাতেই নৌকায় সিল মেলে বাক্স ভরা হয় বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম ১৫ আসনের ধানের শীষের প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট।
চট্টগ্রাম-৪ সীতাকুণ্ড আসনে বিএনপির প্রার্থী আসলাম চৌধুরীর বড় ভাই ইসহাক কাদের চৌধুরীর ওপর ককটেল হামলা হয়। এতে তিনিসহ ৫ জন আহত হন। অন্যরা হলেন- প্রার্থীর চাচাতো ভাই শামসুল হক চৌধুরী বাবুল, মেয়ে শর্মীলা চৌধুরী ও ভাতিজা আদনান চৌধুরী।
রাজশাহী : রাজশাহীর ৬টি আসনের মধ্যে তিনটির ভোট কেন্দ্রগুলোতে বিকাল পর্যন্ত থেমে থেমে চলে হামলা ও সংঘর্ষ। এতে মোহনপুর ও তানোরে দু’জন নিহত হয়। আহত হয় ৩০ জন। সহিংসতার পর বিকালে ভোটাররা আর কেন্দ্রে যাননি। ওই তিনটি আসনের অর্ধশতাধিক কেন্দ্রে সাময়িকভাবে ভোটগ্রহণ বন্ধ থাকে। রাজশাহী-৩ (মোহনপুর-পবা) আসনের অনেক কেন্দ্র দখল হয়ে যায়। মোহনপুরের জাহানাবাদ ইউনিয়নের পাকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে মাইক্রোবাসে করে আসা সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা গুলি করে। এতে পাইকপাড়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে মিরাজুল ইসলাম গুলিবিদ্ধ হন। পরে সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। মিরাজ নিহত হওয়ার পর ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। ওই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আয়েন উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, মিরাজ আওয়ামী লীগ কর্মী। বিএনপি প্রার্থী শফিকুল হক মিলনের দাবি, মিরাজ বিএনপির কর্মী।
রাজশাহী-১ আসনের তানোরের কামারগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলমা প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখল নিয়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া হয়। ফলে এই দুই কেন্দ্রের ভোটাররা আর ভোট দিতে পারেননি। পাঁচন্দর ইউনিয়নের মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে পাঁচন্দর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোদাচ্ছের আলী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। তানোর উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরীর সমর্থকরা কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়। গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে সহিংসতায় ১০ জন আহত হয়।
কুমিল্লা : কুমিল্লা-১০ আসনে বাচ্চু মিয়া (৪৮) নামে এক বিএনপি কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রোববার সকালে উপজেলার বরতলী ইউনিয়নের মুরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে হেলমেট পরা একদল যুবক তাকে বাধা দেয়। বাধা উপেক্ষা করে কেন্দ্রে যেতে চাইলে বাচ্চুকে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে আহত করে দুর্বৃত্তরা। পরে নাঙ্গলকোট হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, হামলাকারীদের শনাক্ত করা যায়নি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে কুমিল্লা-৭ (চান্দিনা) আসনের বেলাশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মজিবুর রহমান (৩৫) নামে এক বিএনপিকর্মী গুলিতে নিহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। মজিবুর পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন এ আসনে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থী অ্যাডভোকেট রেদোয়ান আহমেদ।
রাঙ্গামাটি : কাউখালী উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের কাশখালী এলাকায় যুবদলের সঙ্গে সংঘর্ষে ইউনিয়ন যুবলীগের সম্পাদক বাশির উদ্দিন নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় ৪ বিএনপি কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এছাড়া বাঘাইছড়ি ও লংগদু উপজেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রায় ২০ জন আহত হয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ (সদর-বিজয়নগর) আসনে ভোট দিতে গিয়ে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে ইসরাইল নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। নিহত ইসরাইল রাজঘর গ্রামের ছায়েদ মিয়ার ছেলে। বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের রাজঘর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ওই আসনের সংসদ সদস্য ও মহাজোট প্রার্থী র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী রাজঘর ভোট কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও গুলি ছোড়ে। এ সময় ইসরাইলসহ চারজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা নিহত যুবককে তাদের দলীয় কর্মী বলে দাবি করেছে।
নোয়াখালী : নোয়াখালী-৩ (বেগমগঞ্জ) আসনে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের ২০ নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কর্মীরা। এ আসনের গোপালপুর ইউনিয়নে ব্যালট ছিনতাইয়ের সময় বাধা দিলে আনসার সদস্য নুর নবীকে (৪৬) গুলি করে হত্যা করা হয়। চাটখিল ও সোনাইমুড়ীতে বিএনপি-যুবদল-ছাত্রদলের প্রায় ৫০-৬০ কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে বিএনপির এমপি প্রার্থী প্রাকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল আজিম এ আসনের ৭৭টি কেন্দ্র থেকে বিএনপির এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।
সিলেট : সিলেট-৩ আসনের বালাগঞ্জ উপজেলার আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের কাছে পুলিশের গুলিতে এক ছাত্রদল নেতা নিহত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রের পাশেই তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভোট চলাকালে রোববার বিকাল ৩টায় নিহত হন ছাত্রদল নেতা সায়েম আহমদ সোহেল (২০)। তিনি বালাগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক। উপজেলার পশ্চিম গৌরীপুর ইউনিয়নের নলজুড় গ্রামের ফজলু মিয়ার ছেলে। তবে বালাগঞ্জ থানার ওসি গাজি আতাউর রহমান জানান, পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার কথা সঠিক নয়। চিকিৎসকরা জানান, নিহত সোহেলের বুকের বাম পাশে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।
নরসিংদী : নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় নৌকা প্রতীকের এজেন্ট মিলন মিয়াকে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। একপর্যায়ে ভোট কেন্দ্র থেকে বেশ কয়েকটি ব্যালট বাক্স ছিনতাই হয়। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিবপুরের কুন্দারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
লালমনিরহাট : ৩ (সদর) আসনের রাজপুর ইউনিয়নের পাগলার হাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সংঘর্র্ষে বিএনপি কর্মী তোজাম্মেল হোসেন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও তিনজন। এ ছাড়া বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্ন সংঘর্ষ ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। ভোটারদের অনেকেই কেন্দ্রে গিয়েও ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন। ধানের শীষের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ারও অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থীরা।
বগুড়া : দুপুরে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের বাগইল গ্রামে ধানের শীষের কর্মীদের হামলায় আজিজুল ইসলাম (৩০) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মী নিহত ও নাজমুল হুদা ডুয়েল নামে এক ইউপি সদস্য আহত হয়েছেন। কাহালু থানার ওসি শওকত কবির ও পাইকড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মিঠু চৌধুরী জানান, বিএনপি কর্মীদের হামলায় আজিজুল ইসলাম নিহত হয়েছেন। কেন্দ্র দখলে বাধা দিতে গেলে এ ঘটনা ঘটে। আহত আজিজুল ইসলামকে হাসপাতালে নেয়ার সময় মারা যান। তিনি বাগইল গ্রামের হায়দার আলীর ছেলে। তবে ওই আসনে বিএনপি প্রার্থী মোশাররফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
বগুড়া-৪ আসনের নন্দীগ্রাম উপজেলার রনবাঘা এলাকায় কেন্দ্রের বাইরে নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে ৩ জন আহত হন।
নাটোর : নলডাঙ্গা উপজেলার সমসখলসী গ্রামে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে ভাতিজার ছুরিকাঘাতে চাচা হোসেন আলীর (৫৫) মৃত্যু হয়েছে। রোববার ভোটের দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সমসখলসী ভোট কেন্দ্রের কাছে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হোসেন আলী সমসখলসী গ্রামের ওয়ায়েস উদ্দিনের ছেলে। হোসেন আলী আওয়ামী লীগ সমর্থক হলেও ভাতিজা রতন ছিল বিএনপি সমর্থক। নির্বাচনে ভোট দেয়া, না দেয়া নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। সকালে হোসেন আলী ভোট কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে ভাতিজা রতন আলী হঠাৎ করেই তার ওপর ধারাল ছুরি নিয়ে হামলা চালায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
বিরল (দিনাজপুর) : দিনাজপুর ২ আসনের বিরল উপজেলার শহরগ্রাম মণ্ডলপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার সময় দৌড়ে পালাতে গিয়ে হার্ট অ্যাটাকে বিএনপির এক সমর্থকের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম কিনা মোহাম্মদ (৬৫)। তিনি শহরগ্রাম ইউনিয়নের উত্তর লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত চান্দু মোহাম্মদের ছেলে।
কক্সবাজার : পেকুয়া উপজেলার রাজাখালী ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্রে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় মো. আবদুল্লাহ নামে একজন ছাত্রলীগ নেতা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন। তাদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দুপুর ১২টার দিকে মাতব্বরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। নিহত আবদুল্লাহর বাবার নাম আবুল কালাম। তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাফর আলমের সমর্থক। প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানিয়েছেন, কক্সবাজার-৫ আসনে বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদের সমর্থক যুবলীগ ক্যাডার হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা লাইনে দাঁড়ানো ভোটারদের ওপর হামলা চালায়। এতে আবদুল্লাহ নিহত হন। আহত হন আরও কয়েকজন।
লক্ষ্মীপুর : সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্র এলাকায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ওই ব্যক্তির নাম-পরিচয় জানা যায়নি। দত্তপাড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই ও বড়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল লতিফ জানান, সন্ত্রাসীরা ভোট কেন্দ্র দখল করতে এসে ককটেল ফাটায়। তারা কয়েক রাউন্ড গুলিও করে। এদিকে লক্ষ্মীপুর-২ আসনে ভোট কেন্দ্র দখলে নেয়ার চেষ্টাকালে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ ও ব্যালট বাক্স ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের একটি লেগুনা পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাসহ ৭ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া পৃথক ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হয়েছেন।
গাজীপুর : মহানগরের হাড়িনালে হামলায় কাজী আজিম উদ্দিন কলেজের সাবেক ভিপি ও ছাত্রলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন নিহত হয়েছেন। তিনি মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা এরশাদের বড় ভাই। আহতরা হলেন লিয়াকতের বন্ধু আশরাফ হোসেন ও খায়রুল ইসলাম। মহানগরের ২৮নং ওয়ার্ডের ভানুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের চার নেতাকর্মী আহত হয়। এতে কিছু সময়ের জন্য ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে।
মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য রফিজ উদ্দিন জানান, বেলা দেড়টার দিকে ৪০-৫০ যুবক লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে গাজীপুর সরকারি মহিলা কলেজ ফটক, কাজী আজিম উদ্দিন কলেজ এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে। পরে তারা হাড়িনাল উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রের বাইরে বসে থাকা ওই তিনজনের ওপর হামলা চালায়। এতে তারা আহত হন। তাদের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের চিকিৎসক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে লিয়াকত হোসেন, আশরাফ ও খায়রুল গুরুতর জখম হন। লিয়াকত ও আশরাফকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। স্থানীয় আল নুর হাসপাতালের স্বত্বাধিকারী হাবিবুর রহমান জানান, লিয়াকতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে উত্তরার একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। সদর থানার পুলিশ কর্মকর্তা সমীর চন্দ্র সূত্রধর বলেন, ঘটনাটি পূর্বশত্রুতার জের নাকি নির্বাচনী সহিংসতা তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইল ও মধুপুর : গোপালগঞ্জ উপজেলার নগদা শিমলা গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে রোববার সকালে স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আবদুল আজিজের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার এশার নামাজের পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। টাঙ্গাইল-১ আসনে নির্বাচনী সহিংসতায় ৯টি কেন্দ্রে বিএনপির ৩০ কর্মী আহত এবং ধানের শীষের দুই এজেন্টকে গ্রেফতারের অভিযোগ করেছেন বিএনপির প্রার্থী সরকার সহিদ। আউশনারা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্ট আনোয়ার হোসেন ও আনিসুর রহমান ভুট্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
যশোর ও অভয়নগর : অভয়নগরে বিএনপি কর্মী শামসুর রহমান মোল্যা নিহত হয়েছে। তিনি অভয়নগর উপজেলার বর্ণী গ্রামের বাসিন্দা এবং সাবেক ইউপি সদস্য। সকালে পাথালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে গেলে নৌকার সমর্থকরা তাকে বাধা দেয়। এ সময় তাকে মারধরেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরে তার মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। আওয়ামী লীগের সমর্থকরা দাবি করেন, হার্ট অ্যাটাকে তার মৃত্যু হয়েছে। যশোর-৩ (সদর) আসনে বিএনপি প্রার্থী অনিন্দ্য ইসলাম অমিতকে লাঞ্ছিত ও গাড়ি ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১১টার দিকে শহরের এক নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব বারান্দিপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার সঙ্গে থাকা লোকজনকে গাড়ি থেকে বের করে মারধর করা হয়।
সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার ৪টি আসনের বিভিন্ন স্থানে ভোট দেয়াকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। অনেক ভোটার অভিযোগ করেছেন, ভয়ভীতি দেখিয়ে তাদের কেন্দ্র থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। কিসে ভোট দেবেন জানতে চেয়ে কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটারদের নৌকায় সিল মারতে বাধ্য করা হয়েছে। অনেক কেন্দ্রে নৌকার এজেন্টরা ভোটারদের ভোট দিয়ে দিয়েছেন। অনেককে প্রকাশ্যে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। সাতক্ষীরা-৪ আসনের মুন্সীগঞ্জ ইউনিয়নের সুন্দরবন স্কুল কেন্দ্রে ককটেল ফাটিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে নিষেধ করেছে কিছু লোক। সাতক্ষীরা-৩ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী বিএনপি নেতা ডা. শহিদুল আলম জানান, সকাল ১০টার মধ্যে তার আসনের ১৫৩টি কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালি : পটুয়াখালী-৪ আসনে কলাপাড়ায় ৭৪টি কেন্দ্র থেকে বিএনপির পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুলিশ ধানের শীষের ৮ এজেন্টকে আটক করেছে। কলাপাড়া থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, নাশকতা করতে পারে এমন অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। ধুলাসার ইউনিয়নের চরচাপলী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের কর্মীরা ধানের শীষের ৫ সমর্থককে বেধড়ক পিটিয়েছে। নতুনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি প্রার্থীর ভাগ্নি রিতাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। কুয়াকাটা পৌরসভার দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্ট মিজানুর রহমান, ধানখালী ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্রের পোলিং এজেন্ট মাসুম বিল্লাহকে মারধর করার খবর পাওয়া গেছে।
খুলনা : খুলনা-২ আসনে পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছে ধানের শীষের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু। সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো কেন্দ্রেই তার পোলিং এজেন্টদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি। হুমকিধমকি দিয়ে তাদের বিদায় করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
নারায়ণগঞ্জ ও বন্দর : বন্দর থানার কুশিয়ারা ভদ্রাসানে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারদের হামলায় জাতীয় পার্টির ছয়জন আহত হয়েছে। কেন্দ্রে ঢুকে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর চেষ্টা করলে জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা প্রতিরোধ করেন। এতে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
মুন্সীগঞ্জ ও শ্রীনগর : জেলার অধিকাংশ আসনে বিএনপি প্রার্থীর পক্ষে পোলিং এজেন্ট দেখা যায়নি। মুন্সীগঞ্জ পিটিআই কেন্দ্রের বিএনপির এজেন্ট মামুন মিয়া বলেন, আওয়ামী সমর্থকরা এসে চড়-থাপ্পড় দিয়ে আমাদের বের করে দিয়েছে। নয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে বিএনপির কোনো এজেন্ট নেই। একই চিত্র দেখা যায় মুন্সীগঞ্জ-৩ আসনের পঞ্চসার দারুল ইসলামিয়া আলিয়া মাদ্রাসা ও মুন্সীগঞ্জ-১ আসনের রাজদিয়া-অভয় পাইলট হাইস্কুল কেন্দ্রে। শ্রীনগর উপজেলায় ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষে পাঁচ জন আহত হয়েছে। দুপুরে কেয়টখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ সংঘর্ষ হয়।
রাজধানী : ঢাকা-৪ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী সালাহউদ্দিন আহমদের ওপর হামলা হয়েছে। তবে ঘটনাটিকে ‘সাজানো’ বলছে পুলিশ। সালাহউদ্দিনের ছেলে রবীন জানান, তার বাবা শ্যামপুর সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভোট দিতে গেলে তার ওপর হামলা হয়। তাকে এ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, হামলায় তাদের ১৫-১৬ জন আহত হয়েছে। তার বাবার পিঠে ও পেটে কোপ লেগেছে। সেখানকার প্রিসাইডিং অফিসার বলেন, ধানের শীষের কোনো এজেন্ট কেন্দ্রে আসেনি। কিন্তু সালাহউদ্দিন অভিযোগ করছেন তার এজেন্টকে বের করে দেয়া হয়েছে। হামলার ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছেন পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি ফরিদ উদ্দিন বলেন, এটি সাজানো ঘটনা। ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ঘটনা তদন্ত করে দেখার কথা বলেছেন।
ঢাকা-৬ আসনে ইভিএমে ভোট দিতে দেরি হওয়ায় বেগম কামরুননেছা সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভাংচুর হয়েছে কিছু। ওয়ারী জোনের ডিসি মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি তাদের নলেজে নাই।’ এ আসনে ১২টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছেন মুসলিম লীগের প্রার্থী ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। তিনি বলেন, তার এজেন্টদের মারধর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে জাতীয় পার্টির প্রার্থী কাজী ফিরোজ রশীদের নেতাকর্মীরা। নারী এজেন্টদের যৌন হয়রানি করা হয়েছে। তার এজেন্টদের মধ্যে পাঁচজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
হবিগঞ্জ : ১ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের সংঘর্ষে উভয়পক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাঁক ইউনিয়নের কসবা বাজে সুনাইত্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে ভোট দেয়া নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়।
ফেনী : সোনাগাজীর চরশাহভিখারী উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বোমা বিস্ফোরণ ও গুলি করে কেন্দ্রের ৭টি ভোট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই করা হয়। হামলাকারীদের গুলিতে এএসআই জয়নালসহ ৯ জন গুলিবিদ্ধ হন। এতে আধাঘণ্টা ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। ফেনী-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী মুন্সি রফিকুল আলম, ফেনী-২ আসনে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপি ও ফেনী-৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ আকবর হোসেন ভোটের ফলাফল বর্জনের ঘোষণা দিয়ে পুনর্নির্বাচনের দাবি জানান। ফেনী-১ আসনের প্রার্থী মুন্সি রফিকুল আলম নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন ও এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করে ফলাফল বর্জন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি জানান। ফেনী-২ বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক জয়নাল আবেদিন ভিপি ও ফেনী-৩ আসনের বিএনপি প্রার্থী মোহাম্মদ আকবর হোসেন তার বাড়িতে সাংবাদিকদের ডেকে নিয়ে ভোটের ফলাফল বর্জন করে ফের নির্বাচনের দাবি করে বলেন, সারা রাত ধরে ব্যালটে সিল মারা, এজেন্টদের বের করে দেয়া, নানা ধরনের কারচুপি করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার ও বড়লেখা : মৌলভীবাজার-১ আসনের বড়লেখায় কয়েকটি কেন্দ্রে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার হয়। অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টদের বের করে দিয়ে ভেতরে চলে জাল ভোটের মহোৎসব। আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে দুটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেয়া হয়। দোহালিয়া প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সোহেল আহমদ বটলকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান খসরু অভিযোগ করেন, বড়লেখার কেছরিগুল প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রে ধানের শীষের পোলিং এজেন্টকে ভেতরে প্রবেশ করতেই দেয়া হয়নি। অধিকাংশ কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে শাসক দলের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে নৌকায় সিল মেরেছে। পৌর শহরের ষাটমা প্রাইমারি স্কুল কেন্দ্রের ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দিলে কেন্দ্রের বাইরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। জুড়ী উপজেলার কয়েকটি ভোট কেন্দ্রের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর পোলিং এজেন্টদের বের করে কেন্দ্র দখলে নিয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাল ভোট মেরেছে। সায়পুর ভোট কেন্দ্রের ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীর এক পোলিং এজেন্টকে ছুরিকাঘাত করা হয়। মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনের সোনাপুর ভোট কেন্দ্রে রাজনগর থানার অফিসার ইনচার্জ শ্যামল বণিকসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। ভোট গণনা না করে উপজেলায় নিতে চাওয়ায় এলাকাবাসী ও ধানের শীষের কর্মীরা বাধা দিলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হন।
ময়মনসিংহ : ময়মনসিংহ-৪ সদর আসনের কয়েকটি স্থানে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এতে ঘণ্টাখানেক ময়মনসিংহ মহাবিদ্যালয়, বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, প্রিমিয়ার আইডিয়াল স্কুল ও মুকুল নিকেতন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ বন্ধ থাকে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।
খাগড়াছড়ি : বিএনপি প্রার্থীর ৫৫ জন এজেন্টকে মারধর করা হয়। মহালছড়ি উপজেলায় যুবদল নেতা জিন্দা হোসেন গুলিবিদ্ধসহ জেলায় ১৮০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। খাগড়াছড়ি আসনে বিএনপি প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া ফরহাদ অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ সব কেন্দ্র দখল, বিএনপি নেতাকর্মী ও এজেন্টদের ওপর হামলা, গুলি ও মারধর করেছে। নৌকায় সিল মেরে বাক্স ভর্তি করা এবং ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা প্রদানের অভিযোগ করেন তিনি। জেলা রিটার্নিং অফিসার মো. শহিদুল ইসলাম জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখেছি, তবে সত্যতা পাওয়া যায়নি।
বান্দরবান : এজেন্টদের মারধর ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছে ধানের শীষের প্রার্থী রাজপুত্র সাচিং প্রু জেরী। ভোট কেন্দ্রের সামনে পুলিশের টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগ করেন এই প্রার্থীর এজেন্ট ও ভোটাররা। ওয়ার্ল্ডভিশন কেন্দ্রে ধানের শীষের এজেন্ট মোহাম্মদ ইসমাইলকে বের করে মারধর করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও বালাঘাটা এবং আলীকদমের কয়েকটি ভোট কেন্দ্র থেকে ধানের শীষের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে।
চাঁদপুর ও ফরিদগঞ্জ : চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট সম্পন্ন হওয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি সাংবাদিক শফিকুর রহমান ভোটারসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। আর বিএনপি প্রার্থী হারুনুর রশিদ সহকারী রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তিনি ভোট কারচুপির অভিযোগ করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি করেন। তেলিসাইর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আনসার সদস্যের সঙ্গে ভোটারদের সংঘর্ষ হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৮ রাউন্ড গুলি করে। এ সময় ইটপাটকেল নিক্ষেপে ৩ জন আহত হন। হাজীগঞ্জ রামচন্দ্রপুর বাজারে এক ব্যবসায়ী দোকান পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন কেন্দ্রের সামনে প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় কমপক্ষে ৫০ জন আহত হয়। টোরাগড় হাইস্কুলের পাশে বিএনপি সমর্থকদের হামলায় দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত এবং সাংবাদিক কামরুজ্জামান টুটুল আহত হয়েছেন।
কুড়িগ্রাম ও ফুলবাড়ী : কুড়িগ্রাম-৩ আসনে দুর্গাপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি কর্মীরা নৌকার সমর্থকদের ওপর হামলা করলে দু’জন আহত হয়। বালারচর দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে বিএনপি কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী। উলিপুরের দড়ি কিশোরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বিএনপি সমর্থকরা ব্যালটবাক্স ছিনতাইয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ তিন রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। ফুলবাড়ীতে বিএনপি কর্মীরা ভোট কেন্দ্রে হামলা চালিয়ে এক পোলিং এজেন্টসহ আওয়ামী লীগের ছয় কর্মীকে কুপিয়ে আহত করেছে। পশ্চিম ধনীরাম প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
সুনামগঞ্জ ও তাহিরপুর : ছাতক ও দিরাই উপজেলায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে বিএনপি সমর্থিত একজন ইউপি চেয়ারম্যানসহ অর্ধশতাধিক আহত হয়েছে। তাহিরপুরে বিএনপির তিন নেতাকে আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
পাকুন্দিয়া (কিশোরগঞ্জ) : কিশোরগঞ্জ-২ আসনে পাকুন্দিয়া উপজেলায় পাটুয়াভাঙ্গা ইউনিয়নে মাইজহাটী কালিয়াচাপড়া চিনিকল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ১০ জন আহত হয়।
কুষ্টিয়া : কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনে বিএনপি প্রার্থী জাকির হোসেন সরকার আওয়ামী লীগ কর্মীদের হামলায় আহত হয়েছেন। এ সময় তার গাড়িও ভাংচুর করা হয়। বিএনপি প্রার্থী জাকির হোসেন উপজেলার হাসানবাগ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তার গাড়িতে হামলা চালানো হয়। এতে তিনি আহত হন। আগের রাতে ব্যালট কেটে নৌকায় সিল মারার অভিযোগও করেন তিনি। কুষ্টিয়া-৪ আসনের প্রার্থী সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী বলেন, পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নৌকায় সিল মেরে ব্যালট বাক্সে ভরেছে।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠি-১ আসনের রাজাপুর উপজেলার ইন্দ্রপাশা ও মনোহরপুর কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আটজন আহত হয়েছে। বেশ কিছু কেন্দ্রে সকাল ১০টার মধ্যেই ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যায়। ঝালকাঠি-১ আসনের ৯০টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭-৮টি কেন্দ্রে সকালে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্টরা থাকলেও সকাল ১০টার পর কেন্দ্র ছেড়ে তাদের যেতে বাধ্য করা হয়। ঝালকাঠি-২ আসনে কোনো কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থীর এজেন্ট পাওয়া যায়নি।
জয়পুরহাট : ক্ষেতলাল উপজেলার বটতলী বাজারে বিএনপি-আওয়ামী লীগ সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ছয়জন আহত হয়েছে। জয়পুরহাট সরকারি মহিলা কলেজ, জয়পুরহাট রামদেব বাজলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, জয়পুরহাট সিদ্দিকীয়া কামেল মাদ্রাসা মাঠে ১০-১২টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া পাঁচবিবি উপজেলার কয়েকটি স্থানে বিস্ফোরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গাইবান্ধা : সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পরাণ সরকারি বয়েজ প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে জামায়াত-শিবিরের দুই কর্মী আহত হয়েছে। তারা হলেন- মফিজুল হক (২৪) এবং শাহীন মিয়া (২৩)। গাইবান্ধা শহরের জুবলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মোবাইল ফোনে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্টের কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েক রাউন্ড টিয়ারশেল ও শটগানের গুলি ছোড়া হয়।
পাবনা : ঈশ্বরদী উপজেলার জগন্নাথপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বিএনপি প্রার্থী সমর্থিত জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা নৌকা প্রতীকের সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়। এতে সিদ্দিকুর রহমান ওরফে কুল ময়েজ (৫০), তার স্ত্রী বেলি বেগম (৪০), তার ছেলে রিংকুসহ (৩০) সাতজন আহত হন।
দাউদকান্দি (কুমিল্লা) : কুমিল্লা-১ (দাউদকান্দি-মেঘনা) আসনের চন্দ্রশেখরদীর ভোট কেন্দ্র দখলকে করে দুইপক্ষের সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছে। দাউদকান্দি পৌরসভা হাইস্কুল কেন্দ্রে রেজাউল করিম (২৮), অন্য কেন্দ্রগুলোতে মো. রফিকুল ইসলাম (৪০), ওয়াদুদ (৩০), শাহ আলম (৫০), মঞ্জু হোসেন (৩৫), রায়হান (২০) আহত হয়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ (শিবগঞ্জ) আসনে বিএনপি কর্মীদের আওয়ামী লীগের মারপিটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে ১৪ জন আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত ২ জনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে বিএনপির ৫ জনকে মারপিট করে আওয়ামী লীগ। এদের মধ্যে একজন হলেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান আকবর। রোহনপুরে এক প্রিসাইডিং অফিসারকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ-১ আসনে শৈলকুপার পদমি ভোট কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ১৫ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে। ঝিনাইদহ-৪ আসনের বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম ফিরোজ অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থীর লোকজন কেন্দ্র থেকে এজেন্ট বের করে দিয়ে জাল ভোট দিয়েছে। ঝিনাইদহ-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী আসাদুজ্জামান ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।