ঐক্যফ্রন্টের বিজয় র‌্যালিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি

স্বাধীনতার ৪৭তম বার্ষিকীতে বিজয় র‌্যালি করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।রোববার পূর্বঘোষণা অনুযায়ী দুপুর পৌনে ১২টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে র‌্যালিটি বের হয়। শান্তিনগর মোড় ঘুরে ফের নয়াপল্টনে এসে শেষ হয় এটি।

জাতীয় ঐকফ্রন্টের মুখপাত্র ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিজয় র‌্যালির উদ্বোধন করেন।

বিজয় র‌্যালি হলেও এই শোভাযাত্রা নির্বাচনী প্রচারে রূপ নেয়।র‌্যালিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ধানের শীষ শোভা পায় উপস্থিত নেতাদের হাতে হাতে।আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান উচ্চারিত হয়।

র‌্যালি থেকে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই’, ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’, ‘আমার নেত্রী আমার মা, জেলে থাকতে দেব না’, ‘৩০ ডিসেম্বরের মার্কা কী?— ধানের শীষ’, ‘১৬ ডিসেম্বরের মার্কা কী?—ধানের শীষ’, ‘সারাদেশের মার্কা কী?— ধানের শীষ’, ‘স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া লও লও লও সালাম’ ইত্যাদি।

পূর্ব নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টা খানেক পর শুরু হওয়া র‌্যালিতে সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

একটা খোলা পিকআপ ভ্যানে চড়ে বিএনপর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত বড়ুয়া, ঢাকা-১৩ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী আব্দুস সালাম। বিএনপির নেতাদের পাশাপাশি সুব্রত চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান মান্নার হাতেও ছিল ধানের শীষ।

পেছনে আরেকটি খোলা ট্রাকে ঢাকা-৯ আসনে ধানের শীষের প্রার্থী মহিলা দল সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস র‌্যালিতে অংশ নেন। পুরো র‌্যালিতে দুই হাতে ধান গাছের ছড়া প্রদর্শন করেন আফরোজা আব্বাস।

র‌্যালির সামনের ভাগে ছিলেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা।ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারাও এতে অংশ নেন।

র‌্যালিতে নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম হওয়ার জন্য পুলিশকে দায়ী করেন ফখরুল। বলেন, আজকে এই র‌্যালি বেলা ২টায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পুলিশ বলেছে ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে শেষ করতে হবে। তারপরও যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

বিজয় দিবসের র‌্যঅলিকে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল ঢাকায় অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। প্রতিদিন গ্রেফতার চলছে। আমি সরকারকে হুঁশিয়ার করে দিতে চাই, এই গ্রেফতার বন্ধ করুন, অন্যথায় এর দায়-দায়িত্ব সবকিছু আপনাদের নিতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব নিতে হবে।

র‌্যালি পূর্ব বক্তৃতায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করবেন না। অবিলম্বে বিরোধীদের ওপর হামলা-মামলা ও গ্রেফতার বন্ধ করুন, অন্যথায় সব দায় আপনাদের নিতে হবে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার দায়িত্ব আপনাদের নিতে হবে।

এই নির্বাচনকে দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এই নির্বাচনে সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রে থাকবে নাকি দেশে গণতন্ত্রে ফিরবে। মানুষ স্বাধীনতার ফল ভোগ করতে পারবে কি, পরাধীনতার জিঞ্জিরে আবদ্ধ থাকবে। তাই এই নির্বাচনকে প্রহসনের হতে দেয়া হবে না।

এই নির্বাচনের সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি নির্ভর করছে এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আপনাদের ভোটেই সিদ্ধান্ত হবে আমাদের গণতন্ত্রের নেত্রী, আপোসহীন নেত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে এই অন্যায়-অত্যাচার থেকে মুক্ত করতে পারবো কি পারবো না।

বিজয়ের দিনে মানুষের মুখে হাসি নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ বিজয়ের দিনে আমাদের আনন্দিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আমরা আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, আজকে আমরা আতঙ্কিত ও উৎকণ্ঠিত। এই দেশে গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি থাকবে না এ নিয়ে।’

‘এই নির্বাচনেই মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে তারা একদলীয় শাসন ব্যবস্থার মধ্যে যাবে, না-কি বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের দিকে যাবে’-যোগ করেন ফখরুল।

ভোটের সমতল ক্রীড়াভূমি তৈরিতে নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে। সরকার নজিরবিহীনভাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মী এমনকি প্রার্থীদেরও গ্রেফতার করছে, আমরা এমন পরিস্থিতি আগে কখনো দেখিনি।

তিনি বলেন, সরকার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে এবং নির্বাচন থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কোনো ভূমিকা রাখছে না। তারা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপির প্রার্থীদের ওপর হামলা ও প্রচারে বাধা দেয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, শনিবার আমাদের দলের নেতা মির্জা আব্বাসের ওপরে হামলা হয়েছে। নোয়াখালীতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে গুলি করা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থী সুব্রত চৌধুরীর ওপর হামলা হয়েছে। ঢাকা-৫ আসনের প্রার্থী নবী উল্লাহ নবীর এলাকায় একজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে। রোজ রোজ প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে, অথচ নির্বাচন কমিশন নির্বাক হয়ে তাকিয়ে রয়, কিছুই করে না।

ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শীর্ষ নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজ বিজয়ের দিন। আর আমরা একটা লড়াইয়ের মধ্যে আছি। এ লড়াই হলো ভোটের লড়াই।

দশম জাতীয় নির্বাচনে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে এমন মন্তব্য করে মান্না বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এই দেশে ভোটের নামে একটি প্রহসন হয়েছে। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত করেছি, এবার ওয়াকওভার দেবো না। তাই সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে।সরকার একের পর এক নির্যাতন করছে বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর।