আমাদের ভয় দেখিয়ে কাজ হবে না: ফখরুল

এনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনে ধানের শীষ জয়ী না হলে দেশের গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। তাই আমরা দেশের গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নির্বাচনে গিয়েছি। নির্বাচনে ধানের শীষ জয়ী না হলে দেশমাতা খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। ধানের শীষের প্রার্থী মনিরুল হক চৌধুরীসহ দেশের কারাবন্দি নেতাকর্মীরা মুক্তি পাবেন না। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কামান-ট্যাংক দিয়ে আমাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি, এখন স্বাধীন দেশে সরকার চাইছে জনগণকে দমিয়ে রাখতে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা এখন কারাগারে বন্দি। কিন্তু এখন টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ জেগে উঠেছে। এদেশের মালিক আপনারা, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী নয়।

ভয় দেখিয়ে আমাদের থামিয়ে রাখা যাবে না। ভয় দেখিয়ে আমাদের কাজ হবে না। গতকাল বিকালে কুমিল্লা-১০ সংসদীয় আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কারাবন্দি মনিরুল হক চৌধুরীর পক্ষে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার ফুলতলী মিনি স্টেডিয়াম মাঠে আয়োজিত নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন।

মনিরুল হক চৌধুরীর কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌসের সভাপতিত্বে জনসভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা কামরুজ্জামান রতন, মোস্তাক মিয়া, আবদুল আউয়াল খান, মোস্তফা খান সফুরী, সামছুদ্দিন দিদার, দলের জেলা ও স্থানীয় নেতা শফিকুজ্জামান মজুমদার, মাহবুব চৌধুরী, আবুল বাসার, ইসমাইল হোসেন মজুমদারসহ কুমিল্লা-১০ আসনের সদর দক্ষিণ, নাঙ্গলকোট ও লালমাই উপজেলা নেতৃবৃন্দ।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার মিথ্যা ও ভৌতিক মামলা দিয়ে বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে জেলে পুরে রেখে নিরাপদে নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। গুম খুন নির্যাতন ও মামলা হামলায় লাখ-কোটি মানুষের চোখের জলে ভেসে যাচ্ছে আজ বাংলাদেশ। তাই আপনাদের যতই বিপদ আসুক, যতই ভয় দেখাক আর যতই হুমকি ধমকি দিক আপনারা মাঠ ছেড়ে যাবেন না। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া পর্যন্ত মানুষ জেগে উঠেছে, দাবি উঠেছে এ সরকার আমরা চাই না, পরিবর্তন চাই। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি আওয়ামী লীগ সরকারকে সরিয়ে দেবো, আমরা মাথানত করবো না। জনগণ যদি জেগে উঠে তাহলে অস্ত্র দিয়ে আমাদের কেউ পরাজিত করতে পারবে না। আমরা এদেশের মানুষ, আমাদের অধিকার আমাদেরই প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আপনারা যদি ঐক্যবদ্ধ হয়ে না দাঁড়ান তাহলে দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, পুলিশের কর্মকর্তারা অত্যাচার করছে, গ্রেপ্তার করে হাত-পা ভেঙে দিচ্ছে, গুলি করছে। এ নির্যাতন বন্ধ করুন, জনগণের অধিকার জনগণকে ফিরিয়ে দিন।

এ সময় তিনি নাঙ্গলকোট থানার ওসির প্রত্যাহার দাবি করেন। আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা বলছে দেশের অনেক উন্নয়ন হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। তারা শেয়ার মার্কেট ধ্বংস করে সব টাকা লুটে নিচ্ছে, ব্যাংকের হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করে ক্যানাডা, মালয়েশিয়া, লন্ডনে বাড়ি করেছে, নির্বাচন করছে। এটা দেশের মানুষ জানে। বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে এবং কুইক রেন্টালের নামে তারা কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছে। নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে তিনি বলেন, তাদের একজন কমিশনার বলছেন- নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলছেন কমিশনারের কথা মিথ্যা। কমিশনে অভিযোগ জানিয়েও কোনো কাজ হয় না, ইসি এখন অসহায়, বধির। ইশতেহার প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে বেকার ভাতা, বিনা পয়সায় চিকিৎসা ও স্বল্পমূল্যে কৃষকদের সার দেয়া হবে।

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ৩০শে ডিসেম্বর এদেশের মানুষের মুক্তির দিন। শেখ হাসিনা একটি ভোটের জন্য মানুষ মারে। একাত্তরে পাকিস্তানিদের পরাজিত করে আমরা জয়ী হয়েছিলাম, ৩০শে ডিসেম্বরও আমাদের গণতন্ত্রের জয় হবে। পুলিশের গ্রেপ্তার নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এক মাঘে শীত যায় না। সরকার ভয় পেয়ে গেছে, তাই রাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি এ ধরনের হয়রানি ও নির্যাতন বন্ধ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানান।

সভাপতির বক্তব্যে মনিরুল হক চৌধুরীর কন্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. চৌধুরী সায়মা ফেরদৌস বলেন, একাত্তর দেখিনি, ২০১৮ দেখেছি। গণতন্ত্র মানে কি হাত-পা ভেঙে দেয়া, রাতের অন্ধকারে মায়ের বুক থেকে সন্তানকে কেড়ে নেয়া? আমরা আজ গণতন্ত্র আর মানবতার মুক্তির সংগ্রাম করছি। ৩০ তারিখে আমরা বুলেটকে ভয় পাবো না, ধানের শীষের জন্য কেন্দ্র পাহারা দেবো। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়ে জনতার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, দেশের গণতন্ত্র, বেগম খালেদা জিয়া ও আমার বাবাসহ কারাবন্দি নেতাদের মুক্তির জন্য সকল প্রকার ভয়কে জয় করে কেন্দ্রে যাবেন, আমাদের বিজয় সুনিশ্চিত। ৩০ তারিখের নির্বাচনে আপনারা আমার বাবাকে একটি ভোট দিয়ে মুক্ত করবেন, আমরা বাবাকে পাঁচ বছরের জন্য আপনাদের নিকট ফিরিয়ে দেবো।

এর আগে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা জেলার দাউদকান্দি বিশ্বরোডে এক পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এ সময় তারা দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, কুমিল্লা-১ ও ২ আসনের প্রার্থী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এরপর নেতৃবৃন্দ জেলার চান্দিনা রেদোয়ান আহমেদ ডিগ্রি কলেজ মাঠে ২০ দলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী এলডিপি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদের পক্ষে আয়োজিত সভায় বক্তব্য রাখেন। সভা ঘিরে সকাল থেকে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল এসব নির্বাচনী এলাকায়। নেতাকর্মীরা দলীয় প্রতীক ধানের শীষসহ প্ল্যাকার্ড-পোস্টার নিয়ে সমাবেশে অংশ নেন।