ভোটই আমাদের অস্ত্র — মির্জা আলমগীর

(বিএনপি কমিউনিকেশন) — বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তৃণমূল পর্যায়ে তরুণ সমাজকে জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে উন্নয়ন ও উৎপাদনের মাধ্যমে দেশকে অগ্রগতির পথে এগিয়ে নেয়ায় শত্রুতে পরিণত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, তারেক রহমান দেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সব শ্রেণির মানুষকে একত্রিত করতে সারাদেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতন, নিপীড়ন দুঃশাসনে দেশ আজ ধ্বংসের সর্বশেষ প্রান্তে উপনীত হয়েছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা আজ হুমকির মুখে। বহুদলীয় গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকু মুছে ফেলে আবারও একদলীয় শাসনের নিষ্পেষণে সারাজাতিকে বন্দি করা হয়েছে। এই দুঃসময়ে তারেক রহমানের নিঃশঙ্ক মনোবল ও দৃঢ় নেতৃত্ব দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদী শক্তিকে উজ্জীবিত করছে। আমি তাঁর আশু সুস্থতা, সুখী ও দীর্ঘজীবন কামনা করছি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে এক আলোচনা সভায় নেতা-কর্মীদের ভোট যুদ্ধের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেবার আহবান জানিয়ে তিনি এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার আন্দোলনেই আগামী ৩০ ডিসেম্বরের পরে দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অবশ্যই এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান গত তিনদিন ধরে শতবার  এই কথাই বলছেন নেতা-কর্মীদের যারা মনোনয়নের জন্য আসছেন। তিনি এই ওয়াদা নিচ্ছেন – আমরা ভোটের দিনে এই আন্দোলনটা করবো, সমস্ত মানুষকে নিয়ে আমরা ভোট কেন্দ্রে যাবো।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে আমরা সংগ্রাম করব, লড়াই করব বুকে বুক বেঁধে। ইনশাল্লাহ ৩০ ডিসেম্বরের পরেই এদেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে, ওদের পতাকা উড়বে না।

মামলা-মোকদ্দমায় জর্জরিত দলের নেতা-কর্মীর উদ্দেশ্য বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যদি আজকে মুক্তি চাই, আমাদেরকে সবগুলো অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে এবং সেই অস্ত্র হচ্ছে আমাদের ভোটের অস্ত্র। আমরা যদি আজকে জনগণের কাছে চলে যাই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসি, আমি যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভোটের দিনে ভোট দিতে যাই তাহলে কোনো শক্তি নেই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে। এখানে অনেকে আছেন, আমি অনেককে দেখছি, চিনতে পারছি। পালিয়ে পালিয়ে না থেকে ভোটের জন্য যান, প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যান এবং ভোটের দিন সবাইকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসুন। তাহলেই আমরা জয়যুক্ত হবো।

তারেক রহমানকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার আজকে জন্মদিন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, এখন আমাদের নেতা এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক। তার এই জন্মদিনে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি। আল্লাহতায়ালার কাছে এই প্রার্থনা করবো এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, নির্বাচনের পরে পরেই তাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন এবং আমাদেরকে নেতৃত্ব দেবার সুযোগ করে দেন।

দেশের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা এক কঠিন সময়ে আছি। এই সময় অতিক্রম করতে হবে। আমাদের দেশনেত্রী মিথ্যা মামলায় কারাগারে, আমাদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী কারাগারে, হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা। আজকে আমাদের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম মিয়াকে তিন বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে বাধা, নির্মম অত্যাচার-নির্যাতন। আমরা কী মুখ বুঝে বসে থাকবো? আমরা কী এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করবো না? ১০ বছর চেষ্টা করছি। এখন শেষ চেষ্টা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই সুযোগ আজকে এটা এসেছে। মান্না সাহেব, ডা. জাফরুল্লাহ সাহেব বললেন, আমার হাত-পা বেঁধে রাখবে, এই রাখার মধ্য দিয়েও আমাদের যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা শৃঙ্খল মুক্ত হতে হলে ওই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা যদি মুক্তি চাই, আমাদেরকে ভোটের সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এতো ভয় পেয়েছে যে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব লন্ডন থেকে কথা বলছেন স্কাইপিতে সেটা পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করবে না বলে আবারও  গ্রেফতার করছে, আবারো ভয় দেখাচ্ছে। বিভিন্ন রকম কৌশল। ধানের শীষ সম্পর্কে একটা রিটও করিয়েছে কালকে। ধানের ছড়া ধানের শীষ বলা যাবে না। রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে, কতটা ভীতসন্ত্রস্ত হলে সরকার এসব করতে পারে। এসব কখন করে যখন তার জনসমর্থন থাকে না, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপনাদের প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে। জনগণের শক্তি দিয়ে জাল তৈরি করতে হবে, জনগণের শক্তি দিয়ে তাকে বাধ্য করতে হবে, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের বাঁচা-মরা অস্তিত্বের সংগ্রাম।

নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে একটাই পথ আছে- জনগণের রায়ে এই সরকারকে বদলিয়ে দিতে হবে। ওরা সব ধরনের নির্যাতন করছে। একটা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শত শত নেতাকর্মীকে গ্রেফতার পৃথিবীর ইতিহাসে হয়নি। ওরা সেই ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করার পরেও আবার টেলিভিশনে প্রচার করেব – থ্যাংক ইউ পিএম। কিসের থ্যাংকস? আপনি একটা ফকিরকে ভিক্ষা দিয়েছেন কিনা সেটা দেখিয়ে ওদিকে নিজেকে ধন্যবাদ দেবার জন্য উপস্থাপন করেন আর শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেন। তারজন্য আপনাকে ধিক্কার জানাতে হয়। সকল জনগণকে এক সাথে নিয়ে বলতে হবে তুমি যাও, তোমাকে চাই না। তুমি যতদিন আছো ততদিন পর্যন্ত দেশের গজব হবে। সামনে ভোট। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেন, ওই ভোট আমি কেড়ে নিয়ে জনগণের হাতে দেবো, সেই ভোট জনগণ সমস্ত ধানের শীষের বাক্স ভরিয়ে দেবে। আমাদের কাজ আজকে এটাই।

তিনি বলেন, বিএনপির লাখ লাখ কর্মী। আপনাদের মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে যত মামলা থাকুক। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলতে হবে –  একটাই সুযোগ। আমরা যেভাবে স্লোগান দেই, আপনারা দেন – আসিতেছে শুভ দিন, ধানের শীষে ভোট দিন। এখন বলবেন দিন তো এসে গেছে, দিনক্ষণ ঠিকও হয়ে গেছে। কোন দিন কত তারিখ। ৩০ ডিসেম্বর। এটাই লড়াই। আমরা এই নির্বাচনেই এই জালেম সরকারের পতন ঘটাবো। নির্বাচনের প্রচারের ২১ দিন সারা বাংলাদেশে চষে বেড়াতে হবে। মানুষের কাছে গিয়ে একটাই কথা বলবেন, আমাদের সমস্ত লড়াই ওই ভোটের দিন। আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটাবো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান মান্না।

গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারেক রহমানকে কী আপনারা ভালোবাসেন? তাহলে তাকে আপনাদের ভালোবাসার একটা প্রমাণ দিতে হবে। সেটা হচ্ছে সামনে ৩০ ডিসেম্বর ভোট। আপনাদের সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তবেই জনগণ ভোট দিতে পারবে, তারেক রহমানকে আপনারা দেশে আনতে পারবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে আদায় হবে? আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন যারা নেই তাদেরকে একটা প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। যত অত্যাচার হোক, আরও  যদি এক লাখ লোক গ্রেফতার হয় আপনারা কোনোভাবে ভোটের ময়দান ছেড়ে যাবেন না। রাতের বেলা আপনাকে নিয়ে গেলে ভোটকেন্দ্রে মাকে নিয়ে আপনার ভাই-বোনকে দাঁড়াতে হবে।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৪ জন্মদিন উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়। একাদশ নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থী চূড়ান্ত প্রক্রিয়ার মধ্যে এবার এই আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে তারেক রহমানের জন্মদিন উদযাপিত হয়। তারেক রহমান নিজেও সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। আলোচনা সভার প্রথমে তারেক রহমানের জীবন ও কর্মের ওপর ‘তুমি আছো নয়নে হৃদয়ের গহীনে’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। পরে কন্ঠশিল্পী তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে একটি গান গেয়ে শোনান।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান  সেলিমা রহমান, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির অন্যতম শরিক ডিএলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি একটি কবিতা পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, রেহানা আখতার রানু, হেলেন জেরিন খান, অ্যাডভোকেট সিমকী ইমাম খান, বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান, ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক বাশার সিদ্দিকীসহ আইনজীবী নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।