প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার পদত্যাগ চেয়েছেন বিএনপি মহাসচিব ও
ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নির্বাচন কমিশনে সিইসির ‘অশোভন’ আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে তার সঙ্গে সভা বর্জনের পর সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে জরুরি বৈঠকে বসে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বৈঠক শেষে মির্জা আলমগীর বলেন, ‘দেশে নির্বাচন নয়, হোলি খেলা হচ্ছে। এই মুহূর্ত থেকে সিইসির পদত্যাগ চাই। তিনি বলেন, নির্লজ্জ নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে না পারায় জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।’
মির্জা আলমগীর বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১২টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে আমরা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ কমিশনার ও সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। সারা দেশে বিরোধীদলীয় প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের সঙ্গে সরকারদলীয় সন্ত্রাসী ও পুলিশ অন্যায়, অসাংবিধানিক এবং মারমুখী আচরণে অনেক প্রার্থী ও তাদের কর্মীদের দৈহিকভাবে আহত-নিগৃহীত করা, কয়েকজন প্রার্থীসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী গ্রেপ্তার করা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থী ও প্রার্থীর সহযোগী এবং আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও গ্রেপ্তার, বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের স্বাভাবিক নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়ার বিভিন্ন অভিযোগ তথ্য-প্রমাণসহ উপস্থাপন করা হয়েছে। সোমবার নারায়ণগঞ্জ জেলা গণফোরামের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন চুন্নুকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। আলোচনায় ড. কামাল হোসেনসহ অন্যান্য জাতীয় নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রশাসন ও পুলিশের ক্রমাগত অসহযোগিতা ও বহুক্ষেত্রে আক্রমণকারী সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে আক্রমণের শিকার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে দিন-তারিখ-স্থান উল্লেখ করে অভিযোগ জানান।
তারা (নির্বাচন কমিশন) নির্বাচনকালে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার ক্ষমতাপ্রাপ্ত।
নির্বাচন কমিশনকে এসব ব্যাপারে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের এবং ইতিমধ্যে যেসব সরকারি ও পুলিশ কর্মকর্তা দলীয় কর্মীর মতো আচরণ করেছে তাদের নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে থেকে বিরত রাখা বা অবিলম্বে বদলী করার দাবি জানান। কিন্তু অত্যন্ত ক্ষোভের সঙ্গে আমাদের বলতে হচ্ছে যে, ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দের যুক্তিগ্রাহ্য ও প্রমাণসিদ্ধ বিষয়গুলোকে অগ্রাহ্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ভাষায় অভিযোগগুলোকে অস্বীকার করেন। মির্জা আলমগীর বলেন, সিইসি পক্ষপাতদুষ্ট ও অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দিলে ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ শুধু ক্ষুব্ধ নন, বিস্মিত ও হতাশ হন। নির্বাচন কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান এমন অযোক্তিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিতে পারে তা অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
এই ঘটনায় স্পষ্টতই প্রমাণ হয়েছে যে, সিইসি তাকে নিয়োগদানকারী ক্ষমতাসীন সরকারের অতিবাধ্যগত একজন কর্মচারীর চেয়ে আর বেশিকিছু নন। তার কাছ থেকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচন তো দূরের কথা, নিরপেক্ষ আচরণ পাওয়ারও কোনো সম্ভাবনা নেই। এমন অবস্থায় আমরা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে অবিলম্বে এমন একজন মেরুদণ্ডহীন পক্ষপাতদুষ্ট ব্যক্তির নেতৃত্ব থেকে নির্বাচন কমিশনকে মুক্ত করা অনিবার্য প্রয়োজন বলে মনে করি। আমরা অবিলম্বে তার পদত্যাগ দাবি করছি। এবং যথার্থই একজন নির্দলীয় নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে অনতিবিলম্বে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ করার জন্য প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি জানাচ্ছি। মির্জা আলমগীর বলেন, আজও (মঙ্গলবার) সারা দেশে প্রার্থী ও তাদের অসংখ্য কর্মীদের ওপর সরকারি দল এবং পুলিশের হামলা অব্যাহত রয়েছে।
আজ সন্ধ্যায় ঢাকা-৩ নির্বাচনী এলাকায় চুনকুটিয়া গ্রামে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তার সঙ্গে থাকা অন্তত ৩০ জন কর্মী আহত ও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে, ঢাকা-৬ আসনের প্রার্থী গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীকে ঢাকার সিদ্দিক বাজার এলাকায় প্রচার মিছিল চালানোর সময় পুলিশের সহযোগিতায় সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা আক্রমণ করে। এখানে অ্যাডভোকেট রাসেলসহ তার চারজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। হামলায় আহত হয়েছে ১২ জন কর্মী। সারা দেশ থেকে আমরা প্রার্থী ও তাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও গ্রেপ্তারের খবর পাচ্ছি। এসব অবস্থার অবসানের জন্যই আমরা আজ নির্বাচন কমিশনে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারই যেহেতু নিরপেক্ষ নির্বাচনে আগ্রহী নয়, সেহেতু জনগণকেই আমরা এসব নির্বাচন বিরোধী কার্যকলাপ প্রতিরোধ করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
এ সময় সরকারদলীয় লোকজনের হামলার শিকার বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে রক্তাক্ত জামায় ব্রিফিংয়ে উপস্থিত হন। গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশন আলবদর, আল শামসদের মতো আচরণ করছে। আমার উপর হামলার ঘটনায় নির্বাচন কমিশনকেই দায়ী করছি।’ এর আগে বিভিন্ন অভিযোগ জানাতে দুপুরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ১০ নেতা আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে সিইসির অভিযোগ শুনতে অনীহা ও অশোভন আচরণের কারণে ঐক্যফ্রন্ট নেতারা সভা ত্যাগ করে বের হয়ে আসেন। পরে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সিইসির বিরুদ্ধে অশোভন আচরণের অভিযোগ করেন।
সূত্রঃ মানবজমিন (http://mzamin.com/article.php?mzamin=151564)