বাংলাদেশের ১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মাঝেই রোববার সকাল থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। বিচ্ছিন্ন সহিংসতা, প্রাণহানি, কারচুপির অভিযোগ ও বিরোধী দলের প্রার্থিতা বর্জনের মধ্য দিয়ে ভোট শেষ হয়।
গত দুই মেয়াদের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফল হিসেবে এবারও রেকর্ড চতুর্থ ও টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বেশ গুরুত্বসহ প্রকাশ ও প্রচার করা হয়েছে নির্বাচনের খবর।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের শিরোনাম সময়ে সময়ে পরিবর্তন হয়েছে। প্রথমদিকে ‘প্রাণঘাতী প্রচারণা শেষে নির্বাচনে ভোট দিচ্ছে জনগণ’ শিরোনাম প্রকাশিত হয়েছিল বিশ্ব সংবাদমাধ্যমে।
ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর ‘প্রাণঘাতী সংঘাত ও কারচুপির অভিযোগ’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে পত্রিকাগুলো। নির্বাচন শেষে অধিকাংশ পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়েছে, ‘রেকর্ড জয় শেখ হাসিনার, ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান বিরোধী জোটের।’
‘উচ্চ সতর্কতার মধ্যে বাংলাদেশে ভোট গ্রহণ চলছে’ শিরোনামে বিবিসি বলেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টানা তৃতীয় মেয়াদে দেশটির ক্ষমতায় আসতে চাইছেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটিতে উচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেশজুড়ে প্রায় ৬ লাখ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে এক ডজনের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ভোট গ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর বিবিসি শিরোনাম করে- ‘প্রাণঘাতী সংঘাতের মধ্যে চলছে ভোট গ্রহণ।’ প্রতিবেদনে বলা হয়, কেন্দ্রে কেন্দ্রে সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। এতে ১৮ জন নিহত হয়েছেন। ভোট গ্রহণ শেষে পত্রিকাটি শিরোনাম করেছে- ‘নির্বাচনী ফলাফল বর্জন বিরোধীদের, নতুন সুষ্ঠু ভোটের দাবি।’
‘শেখ হাসিনা : গণতন্ত্রের আইকন থেকে লৌহমানবী’ শিরোনামে বিশ্লেষণী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি। পত্রিকাটি বলছে, টানা ১৫ বছরের জন্য ক্ষমতার মসনদে চড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের আশ্রয় দেয়ায় ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খেতাব কুড়িয়েছেন তিনি। দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো উন্নয়নের অসীম ভূমিকা রাখায় সমর্থকদের কাছে উচ্চ প্রশংসিত হয়েছেন দক্ষিণ এশিয়ার এ লৌহমানবী।
‘জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী প্রধানমন্ত্রী হাসিনা’ শিরোনামের প্রতিবেদনে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, দুর্নীতির দায়ে কারাবন্দি বিরোধীদলীয় নেত্রীর অনুপস্থিতিতে শেখ হাসিনা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। একই শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি ও হিন্দুস্তান টাইমস। নির্বাচনে ভোট কারচুপি হচ্ছে বলে প্রথমে খবর প্রকাশ করে রয়টার্স। পত্রিকাটি জানায়, বিরোধী দলের প্রার্থীরা ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করছেন। ‘নির্বাচনে কারচুপিতে ভোট পড়ছে কম’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট।
শেখ হাসিনাকে পশ্চিমা মিডিয়ায় স্বৈরাচারী (অথরিটারিয়ান) আখ্যায়িত করাকে সম্মান (ব্যাজ অব অনার) হিসেবে দেখছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। নির্বাচনের প্রাক্কালে রয়টার্সকে তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, এরই মধ্যে মিডিয়াবিষয়ক যে নতুন আইন প্রস্তাব করা হয়েছে যদি তার দল ক্ষমতায় ফেরে তাহলে তা কঠোর করার কথা বিবেচনা করা হবে। কঠোর করা হবে আরেকটি আইন, যা এরই মধ্যে কার্যকর হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘পশ্চিমা মিডিয়া শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এটা এখন একটি ‘ব্যাজ অব অনার’।’
‘বাংলাদেশের নির্বাচন : ভয়-ভীতি, সংঘাত-সহিংসতার ভোট’ শিরোনাম কাতারভিত্তিক আলজাজিরা বলছে, নিয়ন্ত্রণমূলক নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর উদ্বেগের মাঝেই রোববার ভোট গ্রহণ শুরু হয়। ভোটের আগের দিনের প্রাণঘাতী সংঘর্ষের কথা তুলে ধরে পত্রিকাটি। একই শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক পোস্ট ও খালিজ টাইমস। ‘নির্বাচনকে হাস্যকর অ্যাখ্যা বিরোধী জোটের নেতা কামাল হোসেনের’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। কামাল হোসেনের উদ্ধৃতি করে পত্রিকা বলছে, ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নতুন নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে বিরোধী জোট।
‘রেকর্ড জয়ের পথে শেখ হাসিনা’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম সিএনএন। যদিও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ বেশ কিছু বিষয়ে অভিযোগ তুলেছে পত্রিকাটি। তবে এতকিছু ছাপিয়ে সিএনএন জানায়, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্রুত অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখায় হাসিনার জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। রেকর্ড গড়ে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্রিটিশ প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান তাদের প্রধান খবরের শিরোনাম করেছে ‘বাংলাদেশে নির্বাচন : সহিংস প্রচারণার পর ভোট গ্রহণ শুরু’। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত এক দশকের মধ্যে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। হত্যা, বিরোধীদের গণধরপাকড়ের পর এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানের দৈনিক ডন, ডেইলি পাকিস্তান, তুরস্কের ডেইলি সাবাহ, আনাদোলু নিউজ এজেন্সি, ব্রিটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্টসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমের লিড নিউজে ঠাঁই পেয়েছে বাংলাদেশের নির্বাচন।